
মুহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন, নিজস্ব সংবাদদাতা
কোরবানির ঈদের মূল শিক্ষা হলো ত্যাগ, সহানুভূতি ও দরিদ্রের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু ফেনীর বিভিন্ন এলাকায় ঈদের সেই মহৎ উদ্দেশ্য আজ প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ, শহরের নানা স্থানে দেখা যাচ্ছে—এক শ্রেণির ব্যক্তি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির ‘অতিরিক্ত মাংস’ সংগ্রহ করে তা ফুটপাতে বসে বিক্রি করছেন নগদ টাকায়।
ঈদের দিন বিকাল থেকেই ফেনীর ট্রাংক রোড, মহিপাল মোড়, রেলস্টেশন এলাকা ও কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের আশেপাশে এমন চিত্র চোখে পড়েছে। ব্যাগভর্তি মাংস নিয়ে রাস্তার পাশে বসে কেউ ২০০ টাকা, কেউ ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। মাংসের পাত্রের পাশে নেই কোনো স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা, নেই বরফ বা ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা। এতে সাধারণ মানুষ যেমন বিস্মিত, তেমনি স্বাস্থ্য ও ধর্মীয় দিক থেকেও বিষয়টি প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
মাংস সংগ্রহের পদ্ধতিটিও অনৈতিক। এক দল মানুষ দরিদ্রদের কথা বলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস চেয়ে নিচ্ছেন। অনেকে মনে করছেন তারা সত্যিই গরিবদের মাঝে ভাগ করে দেবেন। কিন্তু পরে দেখা যাচ্ছে, সেই মাংসই ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে।
ফেনী শহরের বাসিন্দা মোঃ আজহারুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ঈদের দিন আমরা মন থেকে মাংস দান করি। কিন্তু সেটা যদি বাণিজ্যে পরিণত হয়, তাহলে কষ্ট লাগে। এটা যেন একধরনের প্রতারণা।
ফেনী শহরের বড় মসজিদের ইমাম জানান, “কোরবানির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এবং গরিব, আত্মীয় ও প্রতিবেশীর সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করা। এই মাংস বেচাকেনা করা অনুচিত এবং ইসলাম ধর্মে এর অনুমোদন নেই।”
তিনি আরও বলেন, “কেউ যদি গরিবদের নামে মাংস সংগ্রহ করে পরে বিক্রি করে, তা নিঃসন্দেহে প্রতারণা। এটা সমাজের নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।”
ফুটপাতে বিক্রি হওয়া এসব মাংসে নেই কোনো সংরক্ষণের ব্যবস্থা। রোদের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খোলা পরিবেশে পড়ে থাকায় এতে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চিকিৎসকরা। তারা বলেন, এই মাংস খেলে পেটের পীড়া, ফুড পয়জনিংসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিষয়টি স্পষ্টভাবে চোখে পড়লেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কেউ কেউ বলছেন, প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এই ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে।
সচেতন নাগরিকরা বলছেন, যারা সত্যিকারের গরিব তাদের নিজ হাতে মাংস পৌঁছে দেওয়া উচিত। এ ধরনের “সংগ্রাহক” পরিচয়ে যারা ব্যবসা করছে, তাদের বিষয়ে সজাগ থাকা দরকার।
কোরবানির ত্যাগের মাংস যদি অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে ঈদের মূল বার্তা হারিয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে সমাজের সচেতনতা এবং প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।