
মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন, নিজস্ব সংবাদদাতা।।
দারিদ্র্য, পারিবারিক কলহ আর জীবনের অনিশ্চয়তা—সব প্রতিকূলতাকে জয় করে একজন সাধারণ গ্লাস বয় থেকে ফেনীর বিখ্যাত নবী রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউসের সিনিয়র ম্যানেজার হয়ে উঠেছেন শাহাদাত হোসেন খোকন। তাঁর জীবন সংগ্রাম আজ অনেকের জন্যই অনুপ্রেরণার উৎস।
নোয়াখালীর সদর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইস্রাফিলের ছেলে খোকন ছোটবেলা থেকেই অভাব-অনটনের মধ্যে বেড়ে ওঠেন। মাত্র ৯ বছর বয়সে জীবিকার প্রয়োজনে মানুষের বাড়িতে কাজ নিতে হয় তাঁকে। সেখান থেকে মুদি দোকান, এরপর একসময় নিজ এলাকা ছেড়ে চলে আসেন ফেনীতে।
ফেনীতে এসে একসময় নবী রেস্টুরেন্টে গ্লাস বয়ের চাকরি নেন খোকন। কঠোর পরিশ্রম, সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তিনি কর্তৃপক্ষের আস্থা অর্জন করেন। দিনের বেলায় হোটেলের কাজ, আর রাতের বেলায় সিএনজি চালিয়ে তিনি নিজের ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা চালিয়ে যান। ১৯৯৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত নবী রেস্টুরেন্টে নানা দায়িত্বে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন।
২০০৯ সালে তিনি হঠাৎ চট্টগ্রামে চলে যান এবং কিছুদিন পর তৎকালীন বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী নাসির উদ্দীনের ব্যক্তিগত গাড়িচালক হিসেবে নিযুক্ত হন। তবে উচ্চ বেতনের চাকরি থাকা সত্ত্বেও ২০১২ সালে তাঁর মন পড়ে থাকে ফেনীর নবী রেস্টুরেন্টেই। সেই মায়া আর ভালোবাসা তাঁকে ফিরিয়ে আনে পুরনো কর্মস্থলে।
অবাক করার মতো হলেও সত্য, রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ তাঁর প্রতি আস্থা রেখে তাঁকে সরাসরি সিনিয়র ম্যানেজার পদে নিয়োগ দেয়। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি সাফল্যের সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে ব্যক্তিগত জীবনেও তাঁকে নিতে হয়েছে বহু বেদনার ভার। ২০২২ সালে ট্রেন দুর্ঘটনায় হারান তাঁর বোন লাইলি বেগমকে, এবং ২০২৪ সালে মা নূর নাহার সুন্দরী অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে তাঁর বাবা মোহাম্মদ ইস্রাফিল মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় বেঁচে আছেন।
শাহাদাত হোসেন খোকনের জীবন কাহিনি প্রমাণ করে—সততা, পরিশ্রম আর অদম্য ইচ্ছাশক্তিই পারে একজন মানুষকে চরম দুঃসময় থেকেও সাফল্যের উচ্চতায় পৌঁছে দিতে। তাঁর এই গল্প শুধু ফেনী নয়, পুরো বাংলাদেশের তরুণদের জন্য এক অনুপ্রেরণার নাম।